৯৭ বছর বৃদ্ধকে বিএনপির মনোনয়ন, তৃনমূলে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ
আপডেট সময় :
২০২৫-১১-১৯ ১৪:৩৬:১৫
৯৭ বছর বৃদ্ধকে বিএনপির মনোনয়ন, তৃনমূলে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জ -৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসন দেশের উত্তরবঙ্গের একটি কৌশলগত আসন, যেখানে একটি পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ ভোট দেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপি এখন এক নজিরবিহীন মনোনয়ন সংকটে পড়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর এলাকার বাইরে থাকা, প্রায় ৯৭ বছর বয়সী এবং দৃশ্যত অতি বয়োবূদ্ধ একজন ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করায় স্থানীয় রাজনীতিতে বিস্ময় হতাশা ও তৃণমূল থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদেরন মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
আসনটিতে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন— সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী ।
এলাকার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রধানত তার বয়স নিয়ে। তাদের ভাষ্য, ৯৭ বছর বয়সী এই নেতা ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেন না; নিজে হাঁটতেও অন্যের সহায়তা নেন।এমন বয়োবূদ্ধ একজন প্রার্থী কিভাবে সাড়ে চার লাখ ভোটারের দায়িত্ব পালন করবেন? জনমতের ভাষায় এটি যেন “জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রহসন” একটি বৃহৎ আসনকে এমন একজন প্রার্থীর হাতে সঁপে দেওয়ার মতোই।
এই অবস্থায় তৃণমূলে আরও ক্ষোভ জন্মেছে কারণ গত দেড়–দুই দশক ধরে উল্লাপাড়া–সলঙ্গায় সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সদস্য সচিব বর্তমান উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য জনাব আজাদ হোসেন। দমন–পীড়ন, গুম–হত্যা আর হাজারো মামলার মধ্যেও যিনি সংগঠন টিকিয়ে রেখেছেন, সাম্প্রতিক গণসমাবেশে যার সমর্থনে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল, সেই নেতাকে উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন উল্লাপাড়া -সলঙ্গার রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত থাকা এমন একজন ব্যক্তিকে প্রার্থী করায় তৃণমূল বিষয়টিকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সিন্ডিকেটের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছে।
তৃণমূলের বক্তব্য, তাদের মতামত উপেক্ষা করে মনোনয়ন বাণিজ্যের ছাপ রেখে প্রার্থীর পক্ষে গোয়েন্দা রিপোর্ট পর্যন্ত বিকৃত করা হয়েছে। বহু অভিযোগে উঠে এসেছে— অচল প্রার্থীকে তুলে ধরার জন্য দলের ভেতরে অস্বচ্ছ রাজনৈতিক লেনদেন হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভ আরও গভীর করেছে।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়।এম আকবর আলীকে ঘিরে অতীতের বিতর্ক– ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী দেশের বাইরে প্রবাস জীবন, আওয়ামীলীগপন্থী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক, এবং এলাকায় দীর্ঘ অনুপস্থিতি— এসব কারণে তৃণমূলের চোখে তিনি একধরনের রাজনৈতিক সুবিধাবাদী ব্যক্তি।
অনেক নেতাকর্মীর দাবি, তিনি অতীতে বিএনপি কর্মীদের সংগঠন ছাড়ার পরামর্শও দিতেন। ফলে তার মনোনয়ন এলাকায় নতুন নয়, বরং পুরনো ক্ষতকে আরও তীব্র করেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিশ্লেষণটি এসেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে। তাদের বক্তব্য, শারীরিকভাবে অক্ষম এরকম একজন প্রার্থী থাকলে বিএনপির ভোট স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে যাবে এবং সরাসরি লাভবান হবে জামায়াত। ইতোমধ্যে জামায়াতপন্থী মহলে এই প্রার্থীকে নিয়ে ট্রল চলছে, যা স্পষ্ট করে দেয়, ভোটের মাঠে বিএনপি ব্যাকফুটে পড়বে।
অন্যদিকে সাধারণ ভোটারদেরও বড় উদ্বেগ— যিনি প্রচারণামঞ্চে দাঁড়াতে পারেন না, তিনি নির্বাচিত হলে এলাকায় সেবা দেবেন কীভাবে? ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার পর লোকজন এবার প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থীকে সমান গুরুত্ব দেবে— এমন বাস্তবতায় বিএনপি যদি অচল প্রার্থীকে রেখে দেয়, আসনটি হারানো ছাড়া আর কোনো ফলাফল হাতে থাকবে না।
সব দিক বিবেচনায় তৃণমূলের দাবি এখন একটাই— সিন্ডিকেটের ভূমিকা তদন্ত করে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, ত্যাগী, মাঠে-পরীক্ষিত নেতা আজাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া। এটি না হলে বিএনপি শুধু একটি কৌশলগত আসন নয়, বরং সমর্থকদের আস্থা হারানোর ঝুঁকিতেও পড়বে।উল্লাপাড়া -সলঙ্গার রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন সেই সতর্কবার্তাই উচ্চারণ করছে।এই আজাদ হোসেন একজন ত্যাগী পরিক্ষিত জিয়ার সৈনিক। বিগত সৈরাচার হাসিনার শাসন আমলে আজাদ হোসেনের নামে প্রায় ৬০ + মামলা হয়েছে এবং ২৬ বার কারাবরণ করেছে।আজাদ হোসনের পুরো পরিবার হাসিনার আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
আজাদ হোসেনের বাবা মরহুম সরাফত আলী (আলী মেম্বার) ছিলেন উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আজাদ হোসেন উল্লাপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, উপজেলা যুবদলের সভাপতি, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি, পৌর বিএনপির আহবায়ক, উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও বর্তমানে উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।তৃনমূলের নেতাকর্মীরা দাবী করেন আজাদ হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দিলে জামাতের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খানের সাথে নির্বাচনে আজাদ হোসেন ৭০/৮০ হাজার ভোটে নির্বাচিত হবে ইনশাআল্লাহ। ২০০৮ সালে এম আকবর আলী জামাতের এই প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খানের সাথে নির্বাচনে চব্বিশ হাজার ভোট পেয়ে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিলো। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দাআী করেন দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করে আজাদ হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবী জানায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন :
[email protected]
কমেন্ট বক্স